পাঠ বিষয়টা শুধু বইপত্রের পাতাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর অর্থটা আরো ব্যাপক। পাঠ হতে পারে বইয়ের, হতে পারে প্রকৃতির, হতে পারে জীবনের। হতে পারে আরো অনেক কিছুর।

আমাদের জীবন অনেকটা বইয়ের মতোই। আমাদের উচিত সব সময়ই এই বইটার মনোযোগী পাঠক হওয়া। গড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে বয়ে চলা মুহুর্তগুলো এই বইয়ে পাতা। চলার পথে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ছোটছোট ঘটনা, নানারকম ঘাত-প্রতিঘাত আর প্রতিটি মুহুর্ত- এ সব কিছু হচ্ছে সেই পাতাগুলোতে লিপিবদ্ধ কথামালা। কখনও কি এভাবে চিন্তা করেছেন?

এই বইটার সুবিধা হল, এটি কিনতে হয় না। জন্মগতভাবেই প্রতিটি মানুষ এই বইটা মুফতে পায়। হয়ত সেজন্যই সবাই এই বইটা তেমন পড়তে আগ্রহ দেখায় না। সস্তায় পাওয়া বলে কথা!
কিন্তু এটা তো বাস্তব যে, এই বই আপনাকে জ্ঞানের যে ধরন-বরনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে সেটা আপনি হাজারো বই পড়ে; বই পড়তে পড়তে বইপোকা থেকে উইপোকা হলেও, কোথাও পাবেন না।

জীবন বই পাঠ করার মজাটাই অন্যরকম। সে আপনার সামনে প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন তথ্য আর অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হবে। আপনার প্রতিদিনের দেখা জগতটা তখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকবে। অন্য আর দশটা মানুষের চেয়ে জীবন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়নটা হবে অনেক বেশি তত্ত্ব সমৃদ্ধ।

মানুষের গতি-প্রকৃতি বোঝাটা বাস্তব জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এটা অনেকক্ষেত্রে কর্মের সফলতার পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। জীবন-বই পড়ে অভ্যস্ত হযে গেলে দেখবেন অনেকসময় একজনের একটা শব্দ উচ্চারণ থেকেই তার চিন্তা-চেতনা ও ভাব-ভাবনার একটা মাপ আপনি নিয়ে নিতে পারবেন। ফলে কার সাথে আপনার সম্পর্কটা কেমন হবে সেটা সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন বেশিরভাগ সময়।

জীবন-বই পড়ার পর সবচে বেশি যেটা অর্জিত হয় সেটা হল অভিজ্ঞতা। সেই সাথে দৃষ্টির প্রখরতা আর অনুধাবনের সূক্ষ্মতা অর্জনের বিষয়টি তো আছেই। এসব জিনিস একজন ব্যাক্তিকে পরিপক্ব হতে সাহায্য করে। জীবন চলার পথকে কণ্টকমুক্ত আর মসৃন করে।

সাধারণ বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা সময়ে সেটি শেষ হয়ে যায়। চাই বইটা যত বড়ই হোক না কেন! কিন্তু জীবন নামক বইয়ের পাতা আপনি যতই উল্টাবেন ততই সামনে বাড়তে থাকবে। এখানে শেষ বলে কিছু পাবেন না। হ্যা, যদি
কখনও পেয়ে যান তখন আর আপনি এ জগতের বাসিন্দা নন বরং পরকালবাসী হয়ে ভিন্ন জগতে বিচরণ করছেন তখন।

উপকৃত হলে লেখাটি শেয়ার করুন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *